বারাণসী, ৪ মে : প্রয়াত বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ যোগগুরু স্বামী শিবানন্দ বাবা। শনিবার রাতে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১২৯ বছর।
নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন স্বামী শিবানন্দ। শ্বাসকষ্টের সমস্যাতেও ভুগছিলেন। এ অবস্থায় গত ৩০ এপ্রিল বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই গত তিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বামী শিবানন্দ। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাত ৯টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন যোগগুরু। গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি ছিলেন শিবানন্দ ।
মনোরোগে পিএইচডি করা স্বামী শিবানন্দ (যোগী) ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শ্রীনাথ গোস্বামী মাতা ভগবতী দেবী। মা ও বাবা কয়েক বছরের বড় দিদি আরতিসহ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করতেন। চরম দারিদ্র্যতার কারণে ৪ বছর বয়সে উনাকে নবদ্বীপের বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দর কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর, যখন তার বয়স ৬ বছর তিনি সন্ন্যাসীর সঙ্গে বাড়ীতে ফিরে এসে শোনেন তার দিদি না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। তার বাড়িতে আসার ৭ দিন পর মা-বাবাও একই দিনে মারা যান। তিনি স্বামী ওঙ্কারানন্দের সঙ্গে বাবা-মায়ের শ্রাদ্ধ শেষ করে ১৯০১ সালে আবার নবদ্বীপে গমন করেন।
ডক্টর স্বামী শিবানন্দের পড়াশোনা শুরু ১৯০১ সালে নবদ্বীপে। কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি। ১৯২৫ সালে তিনি বিদেশে যান উচ্চ শিক্ষার জন্য। তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। ১৯২৫ সালে শুরু করেন বিশ্বভ্রমণ। বিদেশি ভক্ত অনুরাগীদের আমন্ত্রণে তিনি ইংল্যান্ড, গ্রিস, ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ইতালি, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বুলগেরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ অর্ধশতাধিক দেশ সফর করেছেন। ৩৪ বছর টানা বিদেশ ভ্রমণ করেন তিনি।
পরবর্তীকালে ১৯৫৯ সালে গুরুর নির্দেশে কাশীধামে ফিরে সাধনজগতে ডুব দেন। যোগসাধনার পাশাপাশি নিঃস্বার্থ সেবামূলক কাজেও ব্রতী এই সাধক। পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে কাটিয়েছেন বেশ কয়েক বছর। বৃন্দাবনেও কিছুদিন ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বারাণসী চলে আসেন। গুরু ওমকারনন্দের কাছ থেকে যোগশিক্ষা লাভ করেন। সেখানকার দুর্গাকুণ্ডেই স্বামী শিবানন্দের আশ্রম রয়েছে। গত ১০০ বছর ধরে প্রয়াগরাজ, নাসিক, উজ্জয়ন এবং হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় অংশ নেন নিয়মিত। ২০২২ সালে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত করেন তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পাশাপাশি, যোগরত্ন পুরস্তাক, বসুন্ধরা রত্ন পুরস্কারও পেয়েছেন। কুষ্ঠরোগীদের সেবাতেও নিজেকে উৎসর্গ করেন স্বামী শিবানন্দ। পুরীর প্রায় ৪০০-৫০০ কুষ্ঠরোগীর সেবা করেন তিনি, যাঁরা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করতেন। নিয়মিত দরিদ্র এলাকাতেও যাতায়াত ছিল।
বয়স ১২৯ হলেও শেষ জীবনে যথেষ্ট সক্ষম ছিলেন স্বামী শিবানন্দ। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা যোগব্যায়াম করতেন তিনি, যা তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি হয়ে ওঠে বলে জানা যায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan