২০২২ সালের ২৪শে জুন, শুক্রবার, লেক সেন্ট ক্লেয়ারের গুল আইল্যান্ড যেন পরিণত হয়েছিল উৎসবের এক রঙিন মঞ্চে—বার্ষিক জব্বি নুনা পার্টিকে ঘিরে সেখানে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো উৎসুক জনতা ও উদ্দীপনাপূর্ণ ভক্তরা/Photo : Andy Morrison, The Detroit News

সেন্ট ক্লেয়ার কাউন্টি, ২৬ জুন : কাল শুক্রবার সেন্ট ক্লেয়ার কাউন্টির লেক সেন্ট ক্লেয়ারের অংশে অবস্থিত গুল আইল্যান্ড নামে পরিচিত  বালির ঘাটে চলতি বছরের ৫১তম বার্ষিক জোব্বি নুনার উৎসব  অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর তাপমাত্রা থাকবে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে, যা সাম্প্রতিক বছরের তুলনায় বেশ উষ্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ম্যাকম্ব ডেইলির বরাতে এ খবর দিয়েছে দ্য ডেট্রয়েট নিউজ।
জোব্বি নুনার, যা মূলত স্থানীয়ভাবে এক বিশেষ ধরনের পানির উৎসব হিসেবে পরিচিত, প্রতিবছরই উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়।  তবে উৎসবে অতিরিক্ত মদ্যপান, নগ্নতা এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্যও বিতর্কিত। যার ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়। গ্রীষ্মের তীব্র তাপেও উৎসবে অংশ নিতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়োজকরা উৎসবকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বিশেষ করে তাপদাহজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, ছায়াযুক্ত বিশ্রামস্থল ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ম্যাকম্ব কাউন্টি শেরিফ অ্যান্থনি উইকারশাম জানিয়েছেন, "আমাদের জন্য, পর্যাপ্ত কভারেজ নিশ্চিত করার জন্য আমরা নির্ধারিত অতিরিক্ত ইউনিটের সাথে মানসম্মত পরিমাণ জনবল সরবরাহ করব।" এবারের উৎসবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সীমান্তের উভয় দিক থেকেই প্রায় তিন ডজন জলযান জলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যে ম্যাকম্ব কাউন্টি শেরিফের মেরিন ডিভিশনের টহল নৌকাগুলোর উপস্থিতিও থাকবে উল্লেখযোগ্যভাবে।
ম্যাকম্বের ডেপুটিরা সেন্ট ক্লেয়ার কাউন্টি শেরিফের অফিস, ক্লে টাউনশিপ পুলিশ এবং মার্কিন কোস্ট গার্ডের সহায়কদের সহায়তা করবেন। এছাড়াও নিরাপত্তা টহল দলের অংশ হিসেবে থাকবেন চেস্টারফিল্ড টাউনশিপ পুলিশ, মার্কিন সীমান্ত পেট্রোল, মার্কিন প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ, মিশিগান স্টেট পুলিশ এবং কানাডার রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সদস্যরা।
এদিকে, পার্শ্ববর্তী সেন্ট ক্লেয়ার কাউন্টির শেরিফ ম্যাট কিং জানিয়েছেন, “জলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল বৃদ্ধি করা হবে এবং আশপাশের এলাকাগুলোর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে।” সতর্ক বার্তায় সেন্ট ক্লেয়ার কাউন্টি শেরিফ অফিস বলেছে: “দায়িত্বশীল আচরণ করুন। আপনি কাদের সঙ্গে বাইরে যাচ্ছেন তা জানুন, আপনার দল থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না, প্রচুর পানি পান করুন এবং আবহাওয়ার দিকেও নজর রাখুন।”
এ বছর লেক সেন্ট ক্লেয়ারের পানির স্তর কমে যাওয়ায় নৌচালকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিগত বছরগুলোতে ব্যবহৃত অনেক নেভিগেশন রুট বা কাটাগুলি বর্তমানে কিছু জাহাজের জন্য চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে, জলে নেমে হাঁটার সময় নৌচালকদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। নোঙর, নোঙর দড়ি, এবং জলে লুকিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ—এসবই সম্ভাব্য আঘাতের কারণ হতে পারে।
লেকটির চারপাশের বিভিন্ন মেরিনা এবং পাবলিক অ্যাক্সেস সাইট—যেমন সেন্ট ক্লেয়ার শোরস, হ্যারিসন টাউনশিপ, চেস্টারফিল্ড, ফেয়ার হ্যাভেন এবং উইন্ডসর, অন্টারিও থেকে শত শত নৌকা চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ইভেন্টটির সূচনা ১৯৭৪ সালের ২৮ জুন, যখন কয়েকজন অটোমোবাইল শ্রমিক জুন মাসের শেষ শুক্রবারে হ্রদে একদিনের অবকাশ কাটাতে কাজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। সেদিন থেকেই দিনটি "স্কিপ ডে" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, এবং এটি এখন একটি বার্ষিক নটিক্যাল উৎসবে পরিণত হয়েছে।
ম্যাকম্ব কাউন্টি শেরিফের অফিস জানিয়েছে, গত বছর প্রায় ৫০০টি নৌকা এই উৎসবে অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে আবহাওয়া ছিল তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা ও মেঘলা, যার ফলে অংশগ্রহণ কিছুটা কমে যায়।
জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, এবারের জোব্বি নুনারের সময় লেক সেন্ট ক্লেয়ার অঞ্চলে তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি থাকতে পারে এবং বৃষ্টিপাত বা বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ৭০%। তাই আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতা অনুষ্ঠানের সাফল্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, চলতি বছর নৌকাচালকদের জন্য আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো জ্বালানির উচ্চ দাম। লেক সেন্ট ক্লেয়ারের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানির দাম ভিন্ন হলেও, ইথানল-মুক্ত ৯০ অকটেনের জন্য প্রতি গ্যালন $৫.২৯ থেকে $৫.৫৯ এবং মেরিনাগুলিতে সাধারণ গ্যাসের জন্য $৩.৩৯ থেকে $৪.৯৯ পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এই ব্যয় অনেক চালকের পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তারা অংশগ্রহণকারীদের বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলছেন- যেমন যাত্রার শুরু ও শেষে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস থাকা নিশ্চিত করা। নৌযানটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা আগে থেকে পরীক্ষা করা। যেকোনো বিপদে যোগাযোগের মাধ্যম প্রস্তুত রাখা । হ্রদের মধ্যকার বিপদ যেমন বালির স্তূপ বা পাথর সম্পর্কে অবহিত থাকা। নিজের নৌকাটিকে চিহ্নিত করার উপযুক্ত উপায় রাখা যেমন রঙ, নম্বর, পতাকা ইত্যাদি।
প্রতিবারের মতো এই বছরও হাজারো মানুষ এই আনন্দমুখর জলযাত্রায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নিরাপদ ও সচেতন অংশগ্রহণই সবার জন্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে।
Source & Photo: http://detroitnews.com