১৯৯৭ সালের মে মাসে প্লাইমাউথ টাউনশিপের একটি মাঠে মানুষের দেহাবশেষের সঙ্গে পাওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে একটি শার্টও ছিল/Plymouth Township field. Othram
প্লাইমাউথ টাউনশিপ, ২ জুলাই : ১৯৯৭ সালের মে মাস। মিশিগানের প্লাইমাউথ টাউনশিপের হ্যাগার্টি রোডের একটি পরিত্যক্ত মাঠে একজন ভূমি জরিপকারী একটি গুটিয়ে রাখা পুরনো কার্পেটের মুখোমুখি হন। নিছক কৌতূহলবশত কার্পেটটি খোলার পর তিনি আবিষ্কার করেন মানুষের কঙ্কালের দেহাবশেষ, কয়েকটি পোশাক, একটি সোনার শ্রেণীর আংটি এবং গয়না। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিশ্চিত হয়, এই কার্পেট ও দেহাবশেষ বহু বছর ধরে সেখানেই পড়ে ছিল।
তবে এই ঘটনাটি শুধু একটি অপরিচিত মরদেহ আবিষ্কারের ঘটনা নয়। এটি ছিল এক দীর্ঘ নিখোঁজ জীবনের নীরব আর্তনাদ, যার প্রতিধ্বনি শোনা যায়নি প্রায় তিন দশক ধরে। অবশেষে ২০২৫ সালে এসে, অত্যাধুনিক ডিএনএ প্রযুক্তির সাহায্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে সেই ব্যক্তিকে।তিনি হলেন বেঞ্জামিন হ্যারিসন ফাউন্টেন, একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান, যার জীবন ও মৃত্যু ছিল এক রহস্যে মোড়ানো।
প্রচলিত পদ্ধতিতে শনাক্তকরণে ব্যর্থ হয়ে, ২০২২ সালে প্লাইমাউথ টাউনশিপ পুলিশ যুক্ত হয় টেক্সাসের ওথ্রাম ইনকর্পোরেটেড নামক একটি জেনেটিক বিশ্লেষণ কোম্পানির সঙ্গে। ওথ্রাম তাদের DNAsolves.com প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উন্নত ফরেনসিক জেনেটিক জিনিয়োলজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেহাবশেষ থেকে একটি “অতি-সংবেদনশীল বিস্তৃত ডিএনএ প্রোফাইল” তৈরি করে।
এই ডিএনএ প্রোফাইলের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, মৃত ব্যক্তি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এরপর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে একজন সম্ভাব্য আত্মীয়ের ডিএনএ’র সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত করা হয় এই দেহাবশেষ বেঞ্জামিন ফাউন্টেনের।
বেঞ্জামিন হ্যারিসন ফাউন্টেনের জন্ম হয়েছিল ৬ মে, ১৯২৬ সালে, ভার্জিনিয়ায়। জীবনের একপর্যায়ে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় বাস করেন, এরপর স্থানান্তরিত হন ডেট্রয়েট শহরে। তার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত ১৯৯৭ সালে তার দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। দেহের সঙ্গে থাকা .357 ক্যালিবার স্লাগ, গয়না ও পোশাক দেখে তদন্তকারীরা তার মৃত্যুর পেছনে সম্ভাব্য সহিংসতার ইঙ্গিত পান। তবুও এই মৃত্যুকে হত্যা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি এবং পুলিশ এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
যে দেহাবশেষ প্রায় ২৮ বছর ধরে ওয়েইন কাউন্টি মেডিকেল পরীক্ষকের অফিসে সংরক্ষিত ছিল, তাকে অবশেষে ২০২৫ সালের ১৬ মে, ব্রাউনসটাউনের আওয়ার লেডি অফ হোপ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। নামহীন থেকে নামযুক্ত হওয়া—এ যেন এক পরিপূর্ণ মানবিক পুনর্জন্ম।
প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার কেবল বিজ্ঞানকে নয়, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদাকেও নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। প্রচলিত তদন্ত পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে, জেনেটিক প্রযুক্তি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কেসগুলোতে আলো ফেলছে, নামহীনদের নাম দিচ্ছে, এবং হারিয়ে যাওয়া মানুষদের পরিচয় ফিরিয়ে দিচ্ছে।
কে বা কারা ফাউন্টেনকে হত্যা করেছিল? মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী? কেন তার মরদেহ এভাবে ফেলে রাখা হয়েছিল? এই প্রশ্নগুলো আজও উত্তরহীন। তবে আমরা এখন জানি, এই নামহীন কঙ্কাল কোনো অজ্ঞাত "জন ডো" নন, তিনি বেঞ্জামিন ফাউন্টেন, একজন মানুষ যার একটি ইতিহাস ছিল, পরিবার ছিল, জীবন ছিল।
Source & Photo: http://detroitnews.com
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan