দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কজুড়ে ছিল আড্ডা, খেলাধুলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, র্যাফেল ড্রসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন। সারাদিনের উৎসবজুড়ে ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস, হাসিমাখা মুখ আর মিলেমিশে থাকার এক মানবিক অভিব্যক্তি।

বনভোজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। শিশু ও কিশোরদের জন্য দৌড় প্রতিযোগিতা, মহিলাদের জন্য হাড়িভাঙা ও মিউজিক্যাল পিলো গেম, আর পুরুষ-মহিলাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে ছিল রশি টানাটানি। ছেলেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল ম্যাচ ছিল প্রাণবন্ত ও দর্শনীয়।
বনভোজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জমজমাট বারবিকিউ পার্টি। দুপুরের আগে থেকেই পার্কের এক প্রান্তে ধোঁয়া উঠতে শুরু করে সুস্বাদু গ্রিল আইটেমের। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই উপভোগ করেন মাংসের সুগন্ধে ভরপুর বারবিকিউ। এই পর্বের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন অয়ন চক্রবর্তী, যিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে পুরো আয়োজনটি পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে অন্যান্য বন্ধুরা সম্মিলিতভাবে অতিথিদের যথাসময়ে পরিবেশন করেন গরম গরম বারবিকিউ, যা অংশগ্রহণকারীদের দারুণভাবে তৃপ্ত করে।

দুপুরে বনভোজনে আগত অতিথিদের মাঝে পরিবেশন করা হয় সুসজ্জিত ও সুস্বাদু সব খাবার। ছিল তরমুজ, আইসক্রীমসহ কোমল পানীয়, গরম দুপুরে যা এনে দেয় এক অনন্য প্রশান্তি ও তৃপ্তি। সাংস্কৃতিক পর্বে স্থানীয় শিল্পীরা একের পর এক সুরেলা পরিবেশনায় মুগ্ধ করে তোলেন উপস্থিত দর্শকদের। গানে অংশ নেন পৃথা দেব, চিনু মৃধা, সুস্মিতা চৌধুরী, হারান কান্তি সেন, প্রিয়া সেন ও শর্মি চক্রবর্তী। তাদের কণ্ঠে মিলার পার্ক যেন হয়ে ওঠে এক খোলা মঞ্চ।

দিনের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণ ও র্যাফেল ড্র। মোট ১৭টি আকর্ষণীয় পুরস্কারের মধ্যে প্রথম পুরস্কার ছিল একটি ৭০ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন, যা জিতে নেন হ্যামট্রাম্যাক শহরের বাসিন্দা হারান কান্তি সেন। এই পুরস্কার স্পন্সর করেন ‘টেম্পল অব জয়’-এর প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা এবং চিনু মৃধা। র্যাফেল ড্র ইভেন্টটি ছিল টানটান উত্তেজনা ও আনন্দে পরিপূর্ণ। মুহূর্তে মুহূর্তে বাড়তে থাকে সাসপেন্স—কার হাতে যাবে কোন পুরস্কার! চিৎকার, চেঁচামেচি, হাততালি আর উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হতেই কেউ লাফিয়ে ওঠেন, কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। পুরস্কার হাতে নিয়ে বিজয়ীরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। হাসি আর আবেগে ভরে ওঠে তাদের মুখাবয়ব। প্রাণের এই পর্ব ছিল যেন পুরো অনুষ্ঠানের মুকুটমণি। র্যাফেল টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী অপু ও অরূপ পুরকায়স্থ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ড. দেবাশীষ মৃধা ও চিনু মৃধা অতিথিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং সফল আয়োজনের জন্য সকল স্বেচ্ছাসেবী ও সহযোগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বক্তব্য রাখেন অমুল্য চৌধুরী, বিপ্লব চৌধুরী, অজিত দাশ, মৃদুল চৌধুরী, রিয়েলটর হিমেল দাশ ও অরবিন্দু চৌধুরী সহ আরও অনেকে।
সারাদিনের প্রাণবন্ত এই আয়োজন শেষে অতিথিরা মুখে হাসি আর হৃদয়ে আনন্দ নিয়ে ঘরে ফেরেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে পরিচালনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সৌরভ চৌধুরী।
এই বনভোজন শুধু একটি সামাজিক আয়োজন নয়, এটি ছিল প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিদের জন্য এক মানসিক পুনর্মিলনের অনন্য সুযোগ, যেখানে মাটি ও মানুষের ঘ্রাণ যেন নতুন করে ছুঁয়ে যায় হৃদয়কে। ভবিষ্যতেও এই আয়োজনে বাঙালিয়ানার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক আরও বহুদূর।