পশ্চিমবঙ্গে মরে যাচ্ছে মহৌষধী নিমগাছ

আপলোড সময় : ২৭-০২-২০২৩ ০৪:০১:৩১ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৭-০২-২০২৩ ০৪:০১:৩১ পূর্বাহ্ন

কলকাতা : নিমগাছের মহৌষধী গুণের কথা কে না জানে! শোনা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ নাকি রোজ সকালে এক বাটি নিমপাতার রস পান করতেন। চর্মরোগ থেকে হাম-বসন্ত, এমনকী বাঙালির পাত, নিমের কদর কোথায় নেই ! নিমের কচি পাতার মহৌষধী গুণের জন্যই বাংলায় একটি চালু প্রবাদ রয়েছে ‘ফাল্গুনে নিম দু’গুণ মিঠা’। অথচ এই ভরা চৈত্রেই ঝলসে যাচ্ছে একের পর এক নিমগাছ।  পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড় ও দাঁতন এলাকার ঘটনা। এমন নজিরবিহীন ঘটনায় বিস্মিত পরিবেশপ্রেমীরা। সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম যুগান্তর এ খবর প্রকাশ করেছে।
বেলদার মনোহরপুরের বাসিন্দা, পরিবেশপ্রেমী শিক্ষক অখিলবন্ধু মহাপাত্র। তিনিই প্রথম সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নজরে আনেন। ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। ঠাকুমার দাহকার্য করার জন্য উঠোনের একটি নিমগাছ কাটতে যাই। খেয়াল করি গাছটি প্রায় মারাই গিয়েছে।’ গাছটির ভেতরের অংশে খানিকটা সজীবতা টিকে থাকলেও ওপর থেকে প্রায় সত্তরভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বেলদা থেকে চার কিমি দূরে নিজের গ্রামে ফেরার পথেও দেখেছেন প্রায় বাইশখানা মৃত নিমের গাছ। বেলদার আশেপাশেও নজরে এসেছে মৃত নিম।
তিনি আরও বলেন, ‘বেলদা বাইপাসের ধারে এমনও দেখেছি, কচিপাতা কিংবা মঞ্জরি আসার পরেও সবসুদ্ধ শুকিয়ে গেছে গাছটা। ‘ তাঁর প্রশ্ন, বেছে বেছে কেবল নিম গাছগুলোই মারা যাচ্ছে কীভাবে?  অখিলবাবুর মতোই উত্তর খুঁজছেন দাঁতনের দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, কেশিয়াড়ির বিদ্যুৎ মণ্ডল, সুধাময় গায়েনরাও। কারণ কমবেশি তাঁদেরও একই অভিজ্ঞতা। শুকিয়ে যাচ্ছে মহৌষধী নিম।
পটাশপুর ১নং ব্লকের অমরপুরের বাসিন্দা সোমনাথ দাস অধিকারী দীর্ঘদিন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘নিম গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, এই প্রথম শুনলাম। কোনও ভাইরাসের আক্রমণে এমনটা হতে পারে।’ তবে কোনও আনুমানিক উত্তর দিতে চাইলেন না উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. অনির্বাণ রায়। তিনি বলেন, ‘মৃত গাছগুলি পরীক্ষা না করে আন্দাজে কিছু বলাটা ঠিক নয়।’ তবু বলেন, হতে পারে ভাইরাস কিংবা আবহাওয়াজনিত কোনও কারণ। কিংবা পুষ্টির অভাব।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যার বিভাগীয় প্রধান ড. কৃষ্ণেন্দু আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ‘ড্রাইব্যাক’ নামক এক অসুখের কথা উল্লেখ করলেন। অর্থাৎ গাছটি ওপর থেকে শুকোতে শুরু করে। ড. আচার্য আরও জানালেন, ‘বছর দুই-তিন হল এই অসুখটির প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করছি। তবে কেবলমাত্র বেলদা, কেশিয়াড়ি, দাঁতন নয়। এই রোগ দেখা যাচ্ছে গাঙ্গেয় সমভূমি ও দক্ষিণের উপকূলবর্তী নিমগাছগুলোতে।
‘ ড. আচার্য কাঁথির অধিবাসী হলেও বর্তমানে কলকাতার সন্তোষপুরের বাসিন্দা। সন্তোষপুরে নিজের বাগানেরই একটি নিমগাছ শুকিয়ে মারা গেছে বলে জানালেন তিনি। তবে তিনি নিশ্চিত নন, রোগটি ‘ড্রাইব্যাক’ই কিনা! বলেন এ বিষয়ে এখনও কোনও চর্চা হয়নি। তবে অবিলম্বে শুরু করাটা জরুরি। অখিলবাবুরাও চান দ্রুত নির্ণয় হোক নিমের অসুখ। না হলে যে সহজলভ্য এই মহৌষধীও একদিন হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। বাংলার মানুষের কাছে যা এক অপূরণীয় ক্ষতি।

 


facebook sharing button

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com