সুন্দর ব্যবহার বলতে আমরা বুঝি সুন্দর আচরণ, সুন্দর কথা, নমনীয় ভাষা, রুচিশীল আচরণ, ভাল মন্তব্য, শালীন ও মাধুর্যপূর্ণ কথাবার্তা ইত্যাদি। একজন মানুষের ভালো বা খারাপ আচরণের মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞানের পরিধি বোঝা যায়। ভালো ব্যবহার করা এবং পাওয়া সকলের যেমন কর্তব্য, তেমন অধিকারও। উত্তম আদর্শে জীবন গড়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মডেল হলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)। আল্লাহ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে” (আহযাব ৩৩/২১)। “নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত”। (সুরা কলম-৪)
তিনি সুন্দর শিক্ষা এবং সদাচণের মাধ্যমেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আল্লাহ পাক বলেন, আর আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছেন। যদি আপনি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার পাশ থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
সুন্দর ব্যবহার সকলেই সকলের কাছ থেকে আশা করে। যার আচার-ব্যবহার সবচেয়ে খারাপ সেও সবসময় অন্যের কাছ থেকে সবচেয়ে ভাল ব্যবহারটাই চায়।
তবে দেখা যায় ক্ষেত্র বিশেষে আচার-ব্যবহারের ধরণ ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হতে থাকে। অন্যকে ছোট করে কিছু শুনিয়ে দিতে পারাটাই যেন অনেক বড় অর্জন। " ব্যবহারে বংশের পরিচয়" প্রবাদটি সকলে অন্যের জন্য মনে প্রাণে ধারণ করলেও নিজের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। যেমন- একজন মানুষকে (পুরুষ বা মহিলা) নিজের কর্মক্ষেত্র, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত জনদের সাথে অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার কিন্তু নিজের পরিবারের সাথে বিপরীত আচরণ করতে দেখা যায়। আবার উচ্চপদস্থ লোক তার চেয়ে নিম্নপদের কর্মচারীর সাথে অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করে না, যা খুবই দৃষ্টিকটু, ঘৃনিত ও নিন্দনীয়। এমন তালিকায় শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, উচ্চ-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকল শ্রেণির লোকই তালিকাভুক্ত।
তবে সুন্দর আচরণ করা মানে এই নয় যে, অফিসের বস হয়ে বাবার বয়সী দারোয়ানকে দেখলে দাড়িয়ে যেতে হবে। সুন্দর আচরণ হল প্রত্যেককে তার স্থান অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মান দেওয়া। ইমাম আবূ দাউদ (আঃ) উদ্ধৃত করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।” আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে।”
এমনও দেখা যায়, ধর্মের কোন বিষয়ে দ্বিমত বা মতানৈক্য হলেও এক পক্ষ অপর পক্ষকে ছোট করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অপমান করে কথা বলা, গাল-মন্দ করা, অশ্লীল কথা, অশ্লীল ভাষা, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, দৃষ্টিকটু ইঙ্গিত এবং অসুস্থতায় ভরপুর আচরন করে যা মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের অন্যতম হাতিয়ার। আর বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এসব বেড়েই চলছে।
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানবোধ আছে সে যে স্তরেরই হোক না কেন। মানুষের জন্ম, শিক্ষা, অর্জন তখনই স্বার্থক যখন তার ব্যবহার সুন্দর হয়।
আবার দেখা যায়, দাম্পত্য, পারিবারিক, বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী ও আত্মীয়তার সম্পর্কে কথাবার্তা বা মতের অমিল হলেই সম্পর্কের তোয়াক্কা না করে যে কোনভাবেই একে অপরকে হেয়, অপদস্ত, অপমান, নিচু করার চেষ্টা করা হয়। তেমনিভাবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন কিছু মানুষ আছে মতের অমিল হলেই অল্পতেই রেগে গিয়ে অশ্লীল কথা, গালি দেওয়া এমনকি এক পর্যায়ে মারধর করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তারা দাবি করে তাদের মন পরিষ্কার, মেজাজ গরম, এলোমেলো কোন কিছু সহ্য করতে পারেনা। তাছাড়া নিজের এমন আচরণ অন্যের সামনে গর্বের সাথে উপস্থাপন করে এবং স্বাভাবিক বলে মনে করে।
রাসূল বলেন, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মতো (বোখারি-৬০১১)।
ইসলামের দৃষ্টিতে এমন আচরণ মুনাফিকের চরিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কাবীসা ইবনু উকবা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
১. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে
২. কথা বললে মিথ্যা বলে
৩. চুক্তি করলে ভঙ্গ করে এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।
মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব করার অন্যতম কারণ হল তার মাঝে এমন এক শক্তি দেয়া হয়েছে যা দ্বারা সে ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে। যা অন্য কোন প্রাণীকে দেয়া হয়নি। আর তা হল জ্ঞান। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: “আল্লাহ তায়ালা কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে এগিয়ে আসে”। (সূরা আর-রা’ দ-১১) প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোমলতা যেখানেই থাকবে সেটাই হবে সৌন্দর্যমণ্ডিত। আর যেখান থেকেই তা উঠিয়ে নেওয়া হবে, সেটাই হবে দোষযুক্ত।’ (সহিহ মুসলিম)
একে অপরের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ গড়তে ব্যবহার সুন্দর করা অত্যাবশ্যক। রাগ, ক্ষোভ, অহংকার কোনভাবেই কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। মানুষের মাঝে বেড়ে উঠুক ভালোবাসা, সম্প্রীতি, স্নেহ,মায়া- মমতা, নমনীয়তা এবং উদারতা। সদ্ব্যবহার হোক মানুষের জীবনের অন্যতম সঞ্চয়।
লেখক:
হাসিসা সুরমা
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় , চট্রগ্রাম।
তিনি সুন্দর শিক্ষা এবং সদাচণের মাধ্যমেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আল্লাহ পাক বলেন, আর আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছেন। যদি আপনি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার পাশ থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
সুন্দর ব্যবহার সকলেই সকলের কাছ থেকে আশা করে। যার আচার-ব্যবহার সবচেয়ে খারাপ সেও সবসময় অন্যের কাছ থেকে সবচেয়ে ভাল ব্যবহারটাই চায়।
তবে দেখা যায় ক্ষেত্র বিশেষে আচার-ব্যবহারের ধরণ ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হতে থাকে। অন্যকে ছোট করে কিছু শুনিয়ে দিতে পারাটাই যেন অনেক বড় অর্জন। " ব্যবহারে বংশের পরিচয়" প্রবাদটি সকলে অন্যের জন্য মনে প্রাণে ধারণ করলেও নিজের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। যেমন- একজন মানুষকে (পুরুষ বা মহিলা) নিজের কর্মক্ষেত্র, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত জনদের সাথে অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার কিন্তু নিজের পরিবারের সাথে বিপরীত আচরণ করতে দেখা যায়। আবার উচ্চপদস্থ লোক তার চেয়ে নিম্নপদের কর্মচারীর সাথে অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করে না, যা খুবই দৃষ্টিকটু, ঘৃনিত ও নিন্দনীয়। এমন তালিকায় শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, উচ্চ-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকল শ্রেণির লোকই তালিকাভুক্ত।
তবে সুন্দর আচরণ করা মানে এই নয় যে, অফিসের বস হয়ে বাবার বয়সী দারোয়ানকে দেখলে দাড়িয়ে যেতে হবে। সুন্দর আচরণ হল প্রত্যেককে তার স্থান অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মান দেওয়া। ইমাম আবূ দাউদ (আঃ) উদ্ধৃত করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।” আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে।”
এমনও দেখা যায়, ধর্মের কোন বিষয়ে দ্বিমত বা মতানৈক্য হলেও এক পক্ষ অপর পক্ষকে ছোট করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অপমান করে কথা বলা, গাল-মন্দ করা, অশ্লীল কথা, অশ্লীল ভাষা, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, দৃষ্টিকটু ইঙ্গিত এবং অসুস্থতায় ভরপুর আচরন করে যা মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের অন্যতম হাতিয়ার। আর বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এসব বেড়েই চলছে।
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানবোধ আছে সে যে স্তরেরই হোক না কেন। মানুষের জন্ম, শিক্ষা, অর্জন তখনই স্বার্থক যখন তার ব্যবহার সুন্দর হয়।
আবার দেখা যায়, দাম্পত্য, পারিবারিক, বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী ও আত্মীয়তার সম্পর্কে কথাবার্তা বা মতের অমিল হলেই সম্পর্কের তোয়াক্কা না করে যে কোনভাবেই একে অপরকে হেয়, অপদস্ত, অপমান, নিচু করার চেষ্টা করা হয়। তেমনিভাবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন কিছু মানুষ আছে মতের অমিল হলেই অল্পতেই রেগে গিয়ে অশ্লীল কথা, গালি দেওয়া এমনকি এক পর্যায়ে মারধর করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তারা দাবি করে তাদের মন পরিষ্কার, মেজাজ গরম, এলোমেলো কোন কিছু সহ্য করতে পারেনা। তাছাড়া নিজের এমন আচরণ অন্যের সামনে গর্বের সাথে উপস্থাপন করে এবং স্বাভাবিক বলে মনে করে।
রাসূল বলেন, সম্প্রীতি ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মতো (বোখারি-৬০১১)।
ইসলামের দৃষ্টিতে এমন আচরণ মুনাফিকের চরিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কাবীসা ইবনু উকবা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
১. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে
২. কথা বললে মিথ্যা বলে
৩. চুক্তি করলে ভঙ্গ করে এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।
মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব করার অন্যতম কারণ হল তার মাঝে এমন এক শক্তি দেয়া হয়েছে যা দ্বারা সে ভাল মন্দের পার্থক্য করতে পারে। যা অন্য কোন প্রাণীকে দেয়া হয়নি। আর তা হল জ্ঞান। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: “আল্লাহ তায়ালা কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে এগিয়ে আসে”। (সূরা আর-রা’ দ-১১) প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোমলতা যেখানেই থাকবে সেটাই হবে সৌন্দর্যমণ্ডিত। আর যেখান থেকেই তা উঠিয়ে নেওয়া হবে, সেটাই হবে দোষযুক্ত।’ (সহিহ মুসলিম)
একে অপরের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ গড়তে ব্যবহার সুন্দর করা অত্যাবশ্যক। রাগ, ক্ষোভ, অহংকার কোনভাবেই কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। মানুষের মাঝে বেড়ে উঠুক ভালোবাসা, সম্প্রীতি, স্নেহ,মায়া- মমতা, নমনীয়তা এবং উদারতা। সদ্ব্যবহার হোক মানুষের জীবনের অন্যতম সঞ্চয়।
লেখক:
হাসিসা সুরমা
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় , চট্রগ্রাম।