মহান বিজয় দিবস আজ

আপলোড সময় : ১৬-১২-২০২৪ ১২:২২:১৩ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-১২-২০২৪ ১২:২২:১৩ পূর্বাহ্ন
ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর : আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন আজ। নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে এদিন বাঙালি জাতির জীবনে এসেছে নতুন প্রভাত। বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি অর্জন করেছে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি পেয়েছে একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল–সবুজ পতাকা। পেয়েছে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের অস্তিত্ব আর মর্যাদা।
বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হল আজ। ৩০ লাখ শহীদ ও দু’ লাখ মা–বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় এ বিজয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। ‘শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। এ যেন এক প্রেতপুরী। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। হায় বাংলাদেশ। একি বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। কিন্তু ঠিকই হাঁড়ের আর খুলির স্তুপ একদিন পাললিক হয়।’
বাংলার দামাল ছেলেরা হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। মুক্তির নেশায় এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে জীবনবাজি রেখে শুরু করে মুক্তির যুদ্ধ। ‘ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। ইতোমধ্যেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ডিসেম্বর মাসে শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের।’ অতঃপর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে হানাদাররা। বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে গ্রহণ করে স্বাধীনতার স্বাদ।  রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই প্রথম বিজয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হবে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্র, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা আয়োজন করবে। ডাক বিভাগ এ উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে।
এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
এ ছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয় মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) এবং শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিতে রয়েছে– ভোরে দলীয় সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৭টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ ও সেখান থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে ‘সর্বজনীন কনসার্ট’।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে রয়েছে– সকাল ১০টায় দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে এবং মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বিজয়নগর থেকে বিজয় র‌্যালি।
এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন দল ও তাদের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com