রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ : প্রেক্ষিত পদ্মা নদী

আপলোড সময় : ২৪-০২-২০২৫ ১২:৩১:৩২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-০২-২০২৫ ১২:৩১:৩২ অপরাহ্ন
বিচিত্রবিষয়ে, সহস্রধারায় উৎসারিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী প্রতিভা।  যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই ফলেছে সোনার ফসল। বাংলা ছোটগল্পের পথনির্মাতা এবং শ্রেষ্ঠশিল্পী রবীন্দ্রনাথ। তাঁর 'গল্পগুচ্ছ' র সাথে বাংলাদেশের পদ্মা নদী নয়নের মাঝে নয়নের পাতার মতই অবিচ্ছেদ । 
'ভারতী 'পত্রিকায় তাঁর  প্রথম গল্প 'ভিখারিণী '১২৪৮ সালে প্রকাশিত হয়। পরে কবি যখন সাপ্তাহিক 'হিতবাদী' পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকরূপে যোগ দেন, তখন প্রতিসংখ্যায় একটা করে গল্প লেখা শুরু করেন।
পদ্মা নদীর তীরে জমিদারি দেখাশুনা করতে এসেই তাঁর ছোটগল্পের আকাশ রংধনুর সাতরঙে ব্যাপক এবং বর্ণিল হয়ে ওঠে। বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথের শিল্প-ব্যক্তিত্ব  হিরণ্ময় কিরণদ্যুতিতে ভাস্বর, এ কথা বলাই বাহুল্য।
জমিদারিসূত্রে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতে গিয়ে গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও মানুষের সাথে তাঁর নিবিড় আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, আত্রেয়ী, নাগর, বড়াল, ইছামতি প্রভৃতি নদীর কলগুঞ্জন এবং এদেশের মানবজীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পে অত্যন্ত দীপ্র। বিশেষকরে পদ্মা নদীর সাথে কবির  প্রগাঢ় বন্ধন গল্পগুচ্ছ আর' ছিন্নপত্রাবলীতে ' অপূর্ব বর্ণ-রাগে  বিভাসিত ।
ষড়ঋতুর লীলা-বিভঙ্গে  বাংলাদেশের নিসর্গ বিশেষ করে বর্ষার অনিন্দ্য রূপশ্রী কবি পদ্মায় বোটে বসে প্রত্যক্ষ করেছেন। তখন এক আনন্দময় রূপা ভিসারে আপ্লুত হয়েছেন। গ্রাম বাংলার সহজ সরল প্রকৃতি ও জীবনের পটভূমিকায় গল্পগুলোও মানবীয় রূপ-রসে লাভ করেছে রমণীয় অপূর্বতা। সুগভীর জীবনদৃষ্টির আলোকে  কবি গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের  একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র  অঙ্কনে  অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। 
সাধারণ মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, চাওয়া পাওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত গুঞ্জরণ এসব গল্পে অনায়াস দক্ষতায়  বিকশিত। কবিচিত্তের গীতধর্মী মনোধর্মের স্পর্শে বেশিরভাগ গল্পেই বেজে উঠেছে গীতি কবিতার অমিয় মূূর্ছনা। কোনো আকাশবিহারী কল্পনা নয়, মৃত্তিকাচারী জীবনের অকপট বিন্যাসই তাঁর গল্পের প্রাণ। এ প্রসঙ্গে ডঃ অরুণ কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, "গল্পগুচ্ছের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ নিত্য প্রবহমান মানবজীবনকেই প্রত্যক্ষ করেছেন ও বাণীরূপ দিয়েছেন। "
পদ্মা নদীর সাথে সম্পৃক্ত অনন্য গীত ধর্মী গল্প হল,' পোস্টমাস্টার।' ডক্টর সুকুমার সেন এঁর লেখা থেকে জানা যায়, তখন কবি নদীতীরের যে কুঠিবাড়িতে থাকতেন এর একতলাতে ছিল পোস্টঅফিস। একদিন একজন পোস্টমাস্টারের আগমন ঘটল। তার গৃহকর্মী বালিকা রতন। জীবনের অমোঘ নিয়মে পোস্টমাস্টারের বিদায়ের মাধ্যমে গল্পের বিষাদ -করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে যা অত্যন্ত চিত্তস্পর্শী এবং হৃদয়রঞ্জক। 
শাহজাদপুরের নদীঘাটে শ্বশুরালয় গামী এক বালিকাকে দেখেই রবীন্দ্রনাথের মনে 'সমাপ্তি 'গল্পের মৃণ্ময়ী চরিত্রের প্রেরণা জেগেছিল,এ অভিমত রেখেছেন ডক্টর সুকুমার সেন। পদ্মা নদীসম্পৃক্ত সবচেয়ে বিষাদকরুণ মর্মস্পর্শী গল্পটি হল, 'খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন'।  প্রথম প্রকাশিত হয় 'সাধনা 'পত্রিকায় । দুরন্ত পদ্মায় মনিবের শিশু পুত্র ডুবে গেলে ভৃত্য রাইচরণের নিদারুণ মর্ম-যাতনা এবং পরবর্তীতে আপন ছেলেকে মনিবের ছেলে হিসেবে ফেরত দেয়ার কাহিনী এ গল্পের মূল উপজীব্য। যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ।
এ পর্যায়ে আরেকটি গল্প হল' ছুটি।' এ গল্প বিষয়ে 'ছিন্নপত্রাবলী' থেকে জানা যায়, একদিন শাহজাদপুর গ্রামের ঘাটে কবির বোট এসে লাগলে দেখতে পান ডাঙায় পড়ে থাকা একটা বড় নৌকার মাস্তুল  নিয়ে কিছু  গ্রাম্য বালক নির্মল আনন্দে খেলায় মেতে ওঠেছে। খেলায় নেতৃত্বদানকারী দুরন্ত ছেলেটি কবিকে আকর্ষণ করে।
সে বালকটিই পরবর্তীতে'  ছুটি 'গল্পের ফটিকে রূপান্তরিত হয়। ফটিকের দস্যিপনার চিত্র যেমন গল্পে প্রাণবান, তেমনি তার করুণ পরিণতির নিদারুণ প্রতিচ্ছবি পাঠক হৃদয়কে অশ্রুসজল করে তোলে।
এ প্রসঙ্গে ডক্টর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এঁর মন্তব্যটি  প্রণিধানযোগ্য, "রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গল্প পর্যালোচনা করিয়া তাহার প্রসার ও বৈচিত্র্যে চমৎকৃত না হইয়া থাকিতে পারি না। "
এ উক্তি পদ্মা -সম্পৃক্ত গল্পগুলোতে দিব্যরাগে বিভাসিত হয়ে আছে।

লেখক : জাহান আরা খাতুন
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ হবিগঞ্জ। 

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com