এক ঐতিহ্যের স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়ন

লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল : পটচিত্র

আপলোড সময় : ২২-০৪-২০২৫ ১২:৫০:১০ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০৪-২০২৫ ১২:৫০:১০ পূর্বাহ্ন
ওয়ারেন, ২২ এপ্রিল : গত রোববার নগরীর শিবমন্দিরে “পটচিত্র” পরিবেশনা দেখতে গিয়ে হঠাৎই মনে পড়ে গেল আমার ছোটবেলার কিছু অস্পষ্ট স্মৃতি। আমার যতদূর মনে পড়ে, গ্রামের মেলায় বা বর্ষাকালে মানুষের যখন কিছুই করার থাকত না, তখন বেশ কয়েকবার “পটচিত্র” বা “পটের গান” দেখার সুযোগ হয়েছিল। সে সময় এটাকে কেউ কেউ “পটের গান” বলত, কেউ বলত “পটুয়ার গান”—তবে নামের চেয়ে তা ছিল এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। একটানা গাওয়া গান, তার সঙ্গে ঝুলে থাকা চিত্রের সারি আর শিল্পীর আবেগময় গল্প বলা—এই সমন্বয় ছিল যেন এক ভ্রাম্যমাণ মঞ্চনাটক।
শিবমন্দিরের মঞ্চে যখন পৃথা দেব তার কণ্ঠে পটচিত্রের গান পরিবেশন করছিলেন, আর সেই গান অনুসারে একের পর এক ছবি ভেসে উঠছিল, আমি যেন ফিরে গেলাম আমার হারানো শৈশবে। এমন সাবলীল গায়কী, এমন জীবন্ত উপস্থাপনা সত্যিই অতুলনীয় ছিল।
“পটচিত্র” বাংলার অন্যতম প্রাচীন লোকজ শিল্পরূপ, যা একাধারে চিত্রশিল্প, সংগীত, ও গল্পবলা—তিনটির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। “পট” মানে কাপড় বা ক্যানভাস, আর “চিত্র” মানে ছবি।
এই শিল্পে সাধারণত এক টুকরো লম্বা কাপড়ে ধারাবাহিকভাবে আঁকা হয় কাহিনীভিত্তিক ছবি, এবং সেই ছবিগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে শিল্পী গান গেয়ে যান—এভাবেই দর্শক একসঙ্গে দেখতে পান ছবি ও শুনতে পান কাহিনী। পটচিত্রের সূচনা খ্রিস্টপূর্ব যুগের ভারতীয় লোকশিল্প থেকে বলে মনে করা হয়। বাংলায় এই শিল্পের প্রচলন প্রাক-মুসলিম যুগ, অর্থাৎ ৭ম বা ৮ম শতাব্দী থেকেই দেখা যায়। এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল ভারতের মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম ও বাংলাদেশের যশোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, রাজশাহী অঞ্চলে। 
প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনী, মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল ও অন্যান্য মঙ্গলকাব্য, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক বার্তা, সমসাময়িক দুর্যোগ বা সামাজিক বার্তা (যেমন প্লেগ, বন্যা, সামাজিক অনাচার ইত্যাদি)
পটচিত্র তৈরি ও উপস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন পটুয়া বা পটগায়েন। তাঁরা ছবি আঁকার পাশাপাশি গান গেয়ে সেই ছবির ব্যাখ্যা দেন। পটুয়াদের মধ্যেও ধর্ম-বর্ণের বিভাজন ছিল না—হিন্দু, মুসলিম, দলিত সবাই ছিলেন এই ঐতিহ্যের অংশ। এমনকি মুসলিম পটুয়ারা হিন্দু পুরাণ নির্ভর কাহিনী আঁকতেন—এটাই এই শিল্পের উদারতা ও অন্তর্ভুক্তির চিহ্ন।
কালের প্রবাহে পটুয়াদের অনেকেই পরবর্তীতে রিকশার পেছনে আঁকা শিল্পকলার মাধ্যমে তাঁদের সৃষ্টিকে আধুনিকরূপে নতুন করে উপস্থাপন করেন, যা “রিকশা আর্ট” নামে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ১৯৫০–৬০-এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে গ্রামীণ মেলা, ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে পটচিত্র দেখা যেত ব‍্যপক ভাবে, তবে ৯০ দশকের শুরু পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে বেঁচে ছিল লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল।

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com